মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৫ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: ফৌজদারি মামলায় সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বিধান বাতিল করা হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অবেদনের শুনানি হবে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে।
আজ বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম আবেদনটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠান। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
শুনানির পর কালের কণ্ঠকে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘হাইকোর্টের রায় স্থগিত না করে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য রেখেছেন চেম্বার আদালত। ‘
ফৌজদারি মামলায় সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে তা বাতিল করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২৫ আগস্ট এ রায় দেন। প্রায় তিন বছর আগে কার্যতকর হওয়া সরকারি চাকরি আইনের ৪১ (১) ধারা অবৈধ ঘোষণা করা হয় রায়ে।
রায়ে আদালত বলেছেন, সরকারি চাকরি আইনের এই ধারা ‘সংবিধান পরিপন্থি এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। ‘
সংবিধানের ২৬ বলা আছে মৌলিক অধিকারের সঙ্গে অসামঞ্জস্য আইনের বিধান বাতিল হবে। ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং সব নাগরিক সমানভাবে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী। সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে এ বিষয়টি আরো বিস্তৃত করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি চাকরি আইনের ৪১(১) ধারায় বিশেষ একটি শ্রেণি বা গোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। ফলে তা সংবিধানের ২৬, ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং বাতিলযোগ্য।
রায়ে আদলত বলেছেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০১৩ এর ৩২(ক) ধারায় দুদক কর্মচারীদের এমন সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল। পরে হাইকোর্ট এ ধারাটি বাতিল করেছেন। কিন্তু সরকার এ রায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপিল করেনি। সুতরাং একই বিধানে আবার আইন করার সুযোগ নেই। ’
২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইনের গেজেট জারি হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের গেজেটে বলা হয় ১ অক্টোবর থেকে এ আইন কার্যকর হবে। সে হিসাবে প্রায় তিন বছর ধরে আইনের এ বিধান কার্যবকর আছে।
আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হইবার পূর্বে, তাহাকে গ্রেপ্তার করিতে হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে। ’
আইনের এ ধারা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট আবেদনে করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪১(১) ধারা কেন বেআইনি ও বাতিল করা হবে না এবং এ ধারা সংবিধানের ২৬(১) (২),২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। এ রুলটিই যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত।